Salomonn Migration and Advocacy

অভিবাসন আইন এবং মানসিক স্বাস্থ্যঃ বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্যে তথ্য - Salomonn Migration & Advocacy

    You are currently here!
  • Home
  • Uncategorized অভিবাসন আইন এবং মানসিক স্বাস্থ্যঃ বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্যে তথ্য

অভিবাসন আইন এবং মানসিক স্বাস্থ্যঃ বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্যে তথ্য

November 2, 2023 Raymond Salomonn Comments Off

মেন্টাল হেলথ নিয়ে এই লেখাটি আশা করি সবার কাজে দেবে। আমার বেশ কয়েকজন ক্লায়েন্ট আছেন যারা মনোরোগে ভুগছেন। এদের প্রায়ই সবাই একসময় মানসিক সমস্যা নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে দ্বিধা করতেন। দুইটা ঘটনা এখানে উল্লেখ না করলেই নয়।

প্রথম গল্পঃ একের ভেতরে দুই

ক্লায়েন্ট একজন নারী শিশু। বয়স ১৪ এর নিচে। ওর ভেতরে বাস করছে আরও একজন মানুষ। মানসিক ভাবে দুটি সত্ত্বা ভেতরে ধারণ করে বড় হচ্ছিলো বাচ্চা মেয়েটি। কালে ভদ্রে মেয়ের আচরণে কিছু উপসর্গ নজরে এলেও গুরুত্ব দিতেন না ওর বাবা মা। একদিন যখন বুঝতে পারলেন তাদের সন্তান আসলেই মানসিক ভাবে অসুস্থ, তারা শুরু করলেন ঝাড় ফুক তাবিজের চিকিৎসা। একদিন তো মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে – কন্যা সন্তান আফটার অল। তো এই বিষয়ে পরিচিত কারো সাথে উনারা পরামর্শ করলেন না। পাছে লোকে পাগল বলে ডাকে। সময়ের সাথে মেয়েটির ভেতরের সেই অন্য আরেক সত্ত্বা একটু একটু করে শক্তিশালী হতে শুরু করল। মেয়েটি তখন একজন নারীর শরীর, কিন্তু ভেতরে দুইজন ব্যাক্তির স্বতন্ত্র সত্ত্বা নিয়ে বড় হচ্ছে। একেক সময় একেক সত্ত্বা তার নিজ পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করা শুরু করল। অর্ধ নারী আর অর্ধ পুরুষ বলা ভুল হবে। কখনো একজন পুর্নাঙ্গ নারী, আবার কখনো একজন পুর্নাঙ্গ পুরুষ – দুইজনই নিজ পরিচয়ে আত্মমর্যাদা নিয়ে সমাজের সামনে আসতে চায়। ওদের চেহারা কখনো পরিবর্তন না হলেও কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয়। কখনো মেয়ে কণ্ঠ, কখনো ছেলে।

এই পুরো ব্যাপারটি ঘটছিল ঘরের ভেতরে, অভিবাবকদের চোখের সামনে। তবুও বাবা মায়ের সাহস হয়নি ডাক্তারের কাছে মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার। তাদের একটাই ভয় – সমাজ কি বলবে। ঝাড় ফুঁক তাবিজের সাথে যুক্ত হল পানিপড়া, বাটি চালান, আর দোয়া দুরুদ। ল্যাকেম্বা থেকে ভাড়া করা হল জ্বিন খেদানির পাক সাফ জমিন বাদ হুজুর।

সব ধরনের টোনা, মন্ত্র আর হুজুরের কেরামতি নিষ্ফল প্রমাণ করে একদিন বেরিয়ে এলো ভেতরে আটকে থাকা অদৃশ্য ছেলেটি। সে পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ দেখাতে চায়। ব্যাপারটি প্রথমে নজরে এলো স্কুলের শিক্ষকদের। তাদের হস্তক্ষেপে মেয়েটিকে অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি করানো হল। ওর এখন চিকিৎসা চলছে।

ব্যাপারগুলো এই পর্যন্ত গড়ানোর পরেই অভিবাবকরা আমাকে খুঁজে বের করেন। অভিবাসন আইনের আলোকে মানসিক স্বাস্থ্য এবং নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আছে। ওদের মামলার বর্তমান অবস্থা নিয়ে ঠিক এই মুহুর্তে কিছু জানানো সম্ভব না হলেও শুধু এইটুকু বলতে পারি যে শারীরিক অথবা মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কেউ যদি সহযোগিতা চান, কোন ধরনের সংকোচ না করে আমার সাথে যোগাযোগ করুন।

দ্বিতীয় গল্পঃ আমি পাগল না

একবার এক ক্লায়েন্টকে বললাম যে তার মনঃচিকিৎসকের সেবা নেয়া উচিত। তাদের মতামত পেলে অভিবাসন সংক্রান্ত আবেদনে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। তিনি সাথে সাথে ক্ষেপে গেলেন। চিৎকার করে বলতে লাগলেন যে তিনি পাগল না। তাকে আমি কেন পাগলের তকমা ধারণ করার পরামর্শ দিচ্ছি। আমি অনেক করে বুঝানোর চেষ্টা করলাম যে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে চিকিৎসকের সেবা নেয়ার মানে এই নয় যে একজন মানুষকে উন্মাদ তকমা ধারণ করতে হবে। তিনি কিছুতেই ব্যাপারটি মেনে নিলেন না। পরে জেনেছিলাম, দুঃখজনক কোন একটি পরিণতিকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি।

উপসংহার

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বাঙ্গালী সমাজের নানা কুসংস্কার অনেক দিনের পুরনো একটি প্রথা। এই প্রথা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত আধুনিক শিক্ষিত সমাজের। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক দুর এগিয়ে গেছে। শারীরিক রোগের মতো মানসিক রোগের চিকিৎসা এখন হয়। এতে লজ্জার কিছু নেই।

অস্ট্রেলিয়ার আভিবাসন আইনে মানসিক ভাবে অসুস্থ এমন বাংলাদেশী নাগরিকদের স্থায়ীভাবে থাকা এবং চিকিৎসা নেয়ার বিধান আছে। এর পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সবগুলো আন্তর্জাতিক আইনে অস্ট্রেলিয়া স্বাক্ষর করেছে। মানসিক ভাবে প্রতিবন্ধীদের জোর করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো ক্ষেত্র বিশেষে অবৈধ। এই সংক্রান্ত নির্দেশনা অভিবাসন নীতিমালায় উল্লেখিত আছে। প্রয়োজনে সেই সকল বিধানের সুবিধা নেয়ার আইনগত অধিকার চর্চা করা যেতে পারে।

আপনি একা নন। আমরা আপনার সাথে আছি।